Hydra-র চলনঃ
যে প্রক্রিয়ায় জীবদেহ জৈবিক প্রয়োজনে নিজ চেষ্টায় স্থানান্তরিত হয়, তাকে চলন বলে। সাধারণত এটি প্রাণীর এক স্বতঃস্ফূর্ত সহজাত আচরণ। প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলায়, জনন, খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষা, বিনোদন প্রভৃতি কারণে জীব স্থানান্তরে গমন করে। Hydra সাধারণত নিমজ্জিত বস্তু বা উদ্ভিদের গায়ে সংলগ্ন থাকে, তবে বিভিন্ন উত্তেজকে সাড়া দেয়ার জন্য বা খাদ্য গ্রহণের জন্য স্থান ত্যাগ করতে হয়। চলনের সময় প্রথমে সংবেদী কোষ সাড়া দেয় এবং সে বার্তা বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের স্নায়ু-জালকের ভিতর সঞ্চালিত হয়। ফলে পেশিতন্তু সঙ্কুচিত হয় এবং চলন প্রক্রিয়া শুরু হয়। Hydra-য় নিচে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের চলন দেখতে পাওয়া যায়।
১. লুপিং (Looping) বা ফাসাচলন : লম্বা দূরত্ব অতিক্রমের জন্য Hydra সাধারণত লুপিং চলনের আশ্রয় নেয়। এ প্রক্রিয়ার শুরুতে এক পাশের পেশি-আবরণী কোষগুলো সঙ্কুচিত হয় এবং অপর পাশের অনুরূপ কোষগুলো সম্প্রসারিত হয়। ফলে Hydra গতিপথের দিকে দেহকে প্রসারিত করে ও বাঁকিয়ে মৌখিক তলকে ভিত্তির কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং কর্ষিকার গ্লুটিন্যান্ট নেমাটোসিস্টের সাহায্যে ভিত্তিকে আটকে ধরে। এরপর পাদ-চাকতিকে মুক্ত করে মুখের কাছাকাছি এনে স্থাপন করে এবং কর্ষিকা বিযুক্ত করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এ পদ্ধতির পুনারাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra স্থান ত্যাগ করে৷ জোঁক বা শুঁয়াপোকা চলার সময় যেভাবে ক্রমান্বয়িক লুপ বা ফাঁসের সৃষ্টি হয় হাইড্রার এ চলনও দেখতে অনেকটা একই রকম হওয়ায় ফাঁসাচলনকে জোঁকা চলন বা শুঁয়াপোকা চলন নামেও অভিহিত করা যায়।
২. সমারসল্টিং (Somersaulting) বা ডিগবাজী : এটি Hydra-র সাধারণ ও দ্রুত চলন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার শুরুতে Hydra দেহকে বাকিয়ে চলনের গতিপথে কর্ষিকায় অবস্থিত গুটিন্যান্ট জাতীয় নেমাটোসিস্টের আঠালো ক্ষরণের সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে। এ সময় গন্তব্যস্থলমুখী পেশি-আবরণী কোষের সংকোচন ও অপর পাশের অনুরূপ কোষের সম্প্রসারণ ঘটে। পরে পাদ-চাকতি বিযুক্ত করে কর্ষিকার উপর ভর দিয়ে দেহকে সোজা করে দেয়। পুনরায় দেহকে বাঁকিয়ে পাদ-চাকতির সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে। পরে কর্ষিকা মুক্ত করে দেহকে সোজা করে দেয়। এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
৩. গ্লাইডিং (Gliding) বা অ্যামিবয়েড চলন : এ প্রক্রিয়ায় Hydra পদতলের বহিঃত্বকীয় কোষগুলো থেকে পিচ্ছিল রস ক্ষরণ করে। পরে ঐ স্থান থেকেই প্রক্ষিপ্ত কোষীয় ক্ষণপদের অ্যামিবয়েড চলনের সাহায্যে দেহটি অত্যন্ত ধীরগতিতে মসৃণতলে খুব সামান্য দূরত্বে স্থানান্তরিত হয়।
৪. ভাসা (Floating) : মাঝে মাঝে Hydra পাদ-চাকতির বহিঃত্বকীয় কোষ থেকে গ্যাসীয় বুদবুদ সৃষ্টি করে, ফলে প্রাণী ভিত্তি থেকে বিচ্যুত, হালকা ও উপুর হয়ে পানির পৃষ্ঠতলে ভেসে ওঠে। এখানে বুদবুদ ফেটে মিউকাস ভেলার মতো ছড়িয়ে গেলে Hydra নিম্নমূখী হয়ে ভেসে থাকে। এভাবে প্রাণী ডেউয়ের আঘাতে কিছুদূর ভেসেও যেতে পারে।
৫. সাঁতার (Swimming) : কর্ষিকাগুলোকে ডেউয়ের মতো আন্দোলিত করে এবং দেহকে ভিত্তি থেকে মুক্ত করে Hydra সহজেই দেহকে ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত করে সাঁতার কাটতে পারে।
৬. হামাগুড়ি (Crawling) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra কর্ষিকার সাহায্যে কাছাকাছি কোনো বস্তুকে আঁকড়ে ধরে। পরে পাদ-চাকতি মুক্ত ও কর্ষিকা সংকুচিত করে পাদ-চাকতিকে নতুন জায়গায় স্থাপন করে। এ প্রক্রিয়ায় Hydra-র আরোহণ ও অবরোহণ সম্পন্ন হয়।
৭. হাঁটা (Walking) : এ ক্ষেত্রে Hydra তার দেহের ভার পাদ-চাকতির উপর না রেখে কর্ষিকার উপর স্থাপন করে এবং কর্ষিকাকে পায়ের মতো ব্যবহার করে উল্টোভাবে ধীর গতিতে চলতে পারে।
৮. দেহের সংকোচন-প্রসারণ (Body contraction and expansion) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra দেহকে মুক্ত করে দেহপ্রাচীরের পেশি-আবরণী কোষের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে দেহের আকার দ্রুত খাটো ও লম্বা করে, ফলে এক ধরনের চলনের সৃষ্টি হয়।
Read more